সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নজরুল পরিচিতি



বাংলাদেশের জাতীয় কবি_তালিম হোসেন

নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের গণমানসের কবি, তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের রূপকার। একই সঙ্গে, তাঁর কবিতা সব মানবের কবি-কণ্ঠ, তাঁর গান চির-মানুষের প্রাণের সুর। সাধারণ মানুষের, সকল আশা-আকাক্সক্ষা, বেদনা-বিক্ষোভকে তিনি নিজের জীবনে আরস্থ করেছেন, নিজের কণ্ঠে ধ্বনিত করেছেন। তা করতে গিয়ে তিনি প্রতিভাত হয়েছেন একই সঙ্গে বিদ্রোহীরূপে এবং প্রেমিকরূপে। বিদ্রোহী ও প্রেমিক মূর্তির মধ্যে ভাব ও মেজাজের যে আপাত বিরোধিতা তা সাধারণ মানুষের চেহারাতেই অলক্ষ্য থাকে। এই অলক্ষ্যের প্রকাশ-মূর্তিই ধারণ করেন তার কবি, তার জীবনশিল্পী। নজরুল ইসলাম সে জন্য সাধারণ মানুষের সত্যিকার প্রতিনিধি, তার সার্থক বাণী-মূর্তি।
কেবল অসাধারণ ব্যক্তিত্বই এভাবে সর্ব মানবের অন্তরসত্তাকে নিজের মধ্যে অঙ্গীভূত করতে পারে।
নজরুল ইসলাম নেমে এসেছেন জীবনের রুক্ষ্ম কঠিন মাঠে, উঠে গিয়েছেন তাঁর অধ্যায়ের ঊর্ধ্বলোকে, প্রবেশ করেছেন তাঁর রোমান্টিকতার নির্জন প্রদেশে। কিন্তু তাঁর এসব যাত্রার, সব অবস্থানেরই সঙ্গী চিরন্তন মানুষ। নৈর্ব্যক্তিক অনুভূতির তুরীয় মার্গে আররতি-মগ্নতা তাঁর স্বভাবে ছিল না। তাই তার হাতছানি তাঁকে চরিত্রভ্রষ্ট করেনি। তার আক্রমণ থেকে তিনি বারবার পালিয়ে এসেছেন। মানবতার বেদিতে সব অর্ঘ দিয়ে আপন চরিত্র-লগ্ন অতি মানবতাকে তিনি বিমুখ করেছেন। নিয়তি তাঁকে সর্বকালের মানবতার কবিকণ্ঠ করে রাখতে চেয়েছে বলেই হয়তো এমনটি ঘটেছে।
বাংলাভাষা ও বাঙালির ভাগ্য যে, সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই মানবতাবাদী কবি তাদের মধ্যে জন্মলাভ করেছেন। অসামান্য প্রাণৈশ্বর্যে নজরুল স্বদেশে নিজের মহিমাকে চিহ্নিত ও প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বটে, তবে তাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়ার আয়োজন বা সঙ্গীত তাঁর নিজের করায়ত্ত ছিল না। আর এখন পর্যন্ত বাংলাভাষা ও বাঙালির লজ্জা এই যে, তারাও তাদের এই অনন্য ঐশ্বর্যকে বিশ্বসভায় পরিপূর্ণভাবে উপস্থিত করতে পারেনি।
নজরুল নিজের অবদানে ধন্য করেছেন তাঁর দেশকে, দেশের সমগ্র মানুষকে। তাঁর গুণমুগ্ধ ও প্রেমসিক্ত বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়। বাঙালি হিসেবে তাদের যে ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত সত্তা, নজরুল তার একমাত্র প্রতিনিধি। আবার উভয়ের স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক মানসেরও তিনিই একমাত্র দরদি রূপকার। ইসলামের ঐতিহ্য, আদর্শ ও মূল্যবোধকে নতুন কালের প্রেক্ষাপটে স্বমহিমায় উপস্থাপিত করে তিনি যেমন বাংলার মুসলিম সমাজকে আরবিস্মৃতি ও হীনম্মন্যতার অন্ধকার থেকে গৌরবোজ্জ্বল নবজীবনের পথে তুলে দিয়েছেন, তেমনি আপন অলোকসামান্য প্রতিভার অকৃপণ স্পর্শ দিয়ে হিন্দু সমাজকেও তিনি তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঞ্জীবনী প্রেরণার উদার মানবতার পথে উদ্দীপিত করেছেন।
তাঁর সাধনা ছিল- ক্ষুদ্রতা ও ভেদবুদ্ধির কবল থেকে উদ্ধার করে উভয় সম্প্রদায়কে একদেহ একপ্রাণে স্বাধীনতা, শান্তি ও প্রগতি পথের অভিমুখী করা। অখ- মানবতার প্রেমিক ছিলেন বলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে তিনি উৎসাহবোধ করেননি। তাই সাম্প্রদায়িক উপদ্রবের ঝড়ের লগ্নে প্রশ্ন করেছেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন।’ কিন্তু তাঁর ব্যাকুল প্রশ্ন সদুত্তর খুঁজে পায়নি। বাংলাদেশের হিন্দু আর মুসলমান পৃথক পৃথকভাবে তাঁকে ভালোবাসলেও তাদের রাজনৈতিক মানস একযোগে তাঁর মিলনের বাণীকে উপেক্ষা করেছে। উপমহাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত তাঁর অদম্য মানবিক মিশনের জন্য আপাত-ব্যর্থতার শয্যা রচনা করেছেন।
কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার মতো কৃতির পশরা নিয়ে নজরুল আসেননি। তিনি সেই জাতের এক অমর ব্যক্তিত্ব, সমকালীন মানুষের গ্রহণ-বর্জনে যাঁর মূল্য ও উপযোগী নিঃশেষ হয়ে যায় না। ‘পরোয়া করি না বাঁচি বা না বাঁচি/ যুগের হুজুগ কেটে গেলে-’ তিনিই বলতে পারেন, যার হাতের মুঠিতে থাকে কালের বেয়াড়া ঘোড়ার ঝুঁটি। তারই জোরে তিনি ঘোষণা করেন- ‘আমি যুগে যুগে আসি, আসিয়াছি পুনঃ মহবিপ্লব হেতু!’ সেই ‘মহাবিপ্লব’ কি অতিক্রান্ত হয়েছে? হবে কখনো? ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না/ অত্যাচারীর খড়গ-কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না’- সেদিনের আগে তো তাঁর ছুটি নাই! সেদিন আসবে? কবে আসবে? মানুষের এই পৃথিবীতে সেদিন তো চিরায়ত, অথবা মহাপ্রলয়ের কাল পর্যন্ত প্রসারিত। কাজেই ব্যর্থতার মালা গলায় দিয়ে কে তাকে বিদায় জানাতে পারে! তিনি যে বলেছেন, তিনি ‘বর্তমানের কবি’ সে বর্তমান তো অনন্ত! বিগত কাল, সমকাল ও অনাগত কালে প্রসারিত সে বর্তমান। সেই চির-বর্তমানকে তিনি ভাষা দিয়ে মুখর করেছেন, সুর দিয়ে জাগর করেছেন। যে অতীত অনিঃশেষ স্বপ্নে ঝলকিত, তারই বাণীবাহক নজরুল, যে বর্তমান চিরন্তন সংগ্রামে আন্দোলিত তারই তুর্য বাদক নজরুল; যে ভবিষ্যৎ চিরায়ত আশায় উচ্চকিত তারই দিক নির্দেশক নজরুল। নজরুলের নিজের ছিল সেই অকল্প প্রত্যয়। তাই বুঝি রোগ-ক্লিষ্ট চেতনার প্রদোষেও তাঁর কম্পিত কলমে রেখায়িত হয়েছিল- ‘চির কবি নজরুল’- এই অহঙ্কারী আর ঘোষণা। শ্রী অন্নদাশঙ্কর রায় একদা ছড়া কেটে সুন্দর করে বলেছিলেন :
ভুল হয়ে গেছে বিলকুল-
আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে,
ভাগ হয়নিকো নজরুল।
এই ভুলটুকু বেঁচে থাক,
বাঙালি বলতে একজন আছে-
দুর্গতি তার ঘুচে যাক্।
আর সবকিছু ভাগ হয়ে গেলেও ‘নজরুল’ যে কেনো ভাগ হয়নি তার কারণ তিনি বলেননি। কারণ এই যে, ‘চির কবি’ কখনো ভাগ হয় না। শ্রীরায় বলেছেন ‘বাঙালি বলতে একজন আছে।’ তাঁকে আমার বলতে ইচ্ছা করে- ‘আছে নয়, বাঙালি বলতে ছিলই মাত্র একজন; তিনি নজরুল। দেশ ভাগ হওয়ার পরে নয় বা তাঁর অমন আন্তরিক ছড়া লেখার কালেই শুধু নয়; অভগ্ন, অখ- দেশেও নজরুল ছাড়া সে বাঙালি কখনো আর দ্বিতীয়টি ছিল না। সে জন্যই তো নজরুল না চাইলেও ভারত ভাগ হয়েছে, বাংলাদেশও ভাগ হয়েছে। বস্তুত দেশ ভাগ হওয়া দেখে নয়, তার অনেক আগে, দেশের বিভক্ত হৃদয়ের চূড়ান্তরূপ দেখেই কবি স্তব্ধ, মূক হয়ে গিয়েছিলেন।
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
অবশ্যম্ভাবী আসন্ন পরিণতির রূপ দেখেই কি তাঁর নিজের বাণী নিজের কাছেই ‘কোলাহল’ মনে হয়েছিল? এবং তাই কি এই মরণপণ অভিমান?
বাংলাসাহিত্যের আর এক মহান দিকপাল রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘কালান্তর’-এর প্রবন্ধে এই পরিণতির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন বটে, কিন্তু আদর্শ বাঙালি সত্তার রূপায়ণে সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে নজরুলের মৈত্রী সাধনার যে পথ তা তাঁরও চরণ স্পর্শ পায়নি। পায়নি মধুসূদন বা বঙ্কিমচন্দ্র বা তাঁদের পূর্ব বা উত্তরসূরি অন্য কোনো মহাপ্রাণের। তাই সমান্তরাল পথে পদচারণা করে হিন্দু বাঙালি এবং মুসলমান বাঙালি, তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছে। আর অসম্ভবের সাধনা নিয়ে নজরুল ইসলাম হারিয়ে গিয়েছেন এক অনস্তিত্বে- যার নাম ‘আদর্শ বাঙালিত্ব’।
কিন্তু নজরুলের অস্তিত্ব তো শুধু আদর্শ বাঙালিত্বের সাধনায় অনুভব নয়, তাঁর সাধনা মূলত মানবতারই সাধনা। নজরুল হিন্দু-মুসলমানদের স্বতন্ত্র সত্তাকে অস্বীকার করেননি, তাদের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক পরিচয়কে মানবিক মহিমায় উপস্থাপিত করে তিনি তাদের অমানবিক বৈরি সম্পর্কই শুধু অস্বীকার করতে চেয়েছেন। তবু তাঁর কি এমন কোথাও ভুল হয়েছিল, যেখানে রবীন্দ্রনাথের ভুল হয়নি, ইকবালের ভুল হয়নি? সম্ভবত তাই। অন্তত ক্রান্তির ইতিহাস তাই প্রমাণিত করেছে। নজরুল তাঁর একক ব্যক্তিত্বে রবীন্দ্রনাথ ও ইকবালের দ্বৈত-স্বরূপকে ধারণ করতে চেয়েছিলেন। সেটা ছিল সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জাতি-চেতনার দিক থেকে ব্যক্তিসত্তার এমন এক সংকট সন্ধি, যার উত্তরণের সীমানা বিস্তৃত ছিল বাঙালিত্বকে ছাড়িয়ে সঙ্কর ভারতীয় জাতিসত্তার মধ্যে। তাই, যখন ভারত বিভক্ত হলো তার ফলে ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গও দু’ভাগ হয়ে তার অনুগামী হলো। আর বিবর্তিত দুই নতুন দেশের দুই পৃথক জাতিসত্তা ভাগ করে নিল রবীন্দ্রনাথ ও ইকবালকে আপন আপন মুখপাত্র রূপে। নজরুল কার অথবা কিসের মুখপাত্র, সে মীমাংসা রইল মুলতবি।
কিন্তু মাত্র সিকি শতাব্দীর ব্যবধানে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আর একবার পটপরিবর্তন ঘটল। উমহাদেশের ভাঙাগড়ার মূলতবি ইতিহাস আজ আবার নতুন এক ভৌগোলিক জাতি-রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে- যার নাম বাংলাদেশ। এ এক নতুন বাংলাদেশ, যা রবীন্দ্রনাথের ভারতবর্ষ থেকে এবং ইকবালের পাকিস্তান থেকে এক নতুন অবস্থানে নিজেকে চিহ্নিত করেছে এবং এক স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট সত্তায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ সত্তার বিবর্তনের ধারাই বলে দেয় কে তার মুখপাত্র।
উপমহাদেশের ভূগোল, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাজনীতির যে চতুরাশ্রমের পরিক্রমায় নব-অভ্যুদিত বাংলাদেশের উত্তরণ, তারই আদর্শিক প্রতিনিধি নজরুল। সবার নজরুল আজ বাংলাদেশের জাতীয় মানসের অভ্রান্ত দিশারী। এ কথাটা আমাদের বুঝতে হবে যে, আন্তঃমানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের দ্বৈতসত্তার সাগর সঙ্গম বাংলাদেশ। নিয়তি কর্তৃক সেই ভূমিকাই তার নির্দিষ্ট হয়েছে। তাই নজরুলের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ও ইকবালের দ্বৈত-স্বরূপের যে প্রতিনিধিত্বকে এককালে বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছিল, তাই আজ বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এক নতুন সত্যের মহিমা লাভ করেছে। বাংলাদেশ মুসলিম-গণপ্রধান, তাতে কি? আমাদের সাংস্কৃতিক মানসের পটভূমিতে আছেন রবীন্দ্রনাথ ও ইকবাল। কিন্তু নজরুল যদি থাকেন আমাদের নতুন জীবনায়নের মুখপাত্র ও আলোক-দিশারীরূপে, ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের কাছেই অভেদ মানবিক সম্পর্কের পাঠ গ্রহণ করবে।
Advertisements

নজরুলের দৃষ্টিতে দরিদ্র ও দারিদ্র্য_মোহাম্মদ মাহ্ফুজউল্লাহ্

বিদ্রোহী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার নাম ‘দারিদ্র্য’। এ কবিতাটি তাঁর ‘সিন্ধু-হিন্দোল’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। কবিতাটি ১৩৩৩ অগ্রহায়ণের ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হয়। পরে একই বছর মাঘের সওগাতে পুনর্মুদ্রিত হয়। কবিতাটির সূচনাতেই কবি লিখেছেন—
হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান!
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান
কণ্টক-মুকুট শোভা।—দিয়াছ তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
উদ্ধৃত উলঙ্গ দৃষ্টি; বাণী ক্ষুরধার,
বীণা মোর শাপে তব হ’ল তরবার!
(আংশিক) বিস্তারিত পড়ুন 

কারাবন্দি নজরুল_ড. আব্দুর রহিম


ব্রিটিশ ভারতে যাঁর গ্রন্থ সবচেয়ে বেশি বাজেয়াপ্ত হয়েছে, তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। একের পর এক ব্রিটিশের শাসন-শোষণ-অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি গ্রন্থ লিখেছেন এবং সেগুলো ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম যিনি কাব্যের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, তিনি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৭৯-১৯৩১)। তাঁর ‘অনল প্রবাহ’ (১৯০০) কাব্যে একদিকে মুসলমানদের উজ্জীবনের কথা ব্যক্ত হয়েছে, অন্যদিকে তাতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি বিক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯০৮ সালে ‘অনল প্রবাহ’ বর্ধিত আকারে (দ্বিতীয় সংস্করণ) প্রকাশিত হয়। ১৯০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ সরকার তা বাজেয়াপ্ত করে।বিস্তারিত পড়ুন 

গুরু-শিষ্য সম্পর্ক : রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল_হাবিবুর রহমান স্বপন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘১৪০০ সাল’ কবিতা লেখেন ১৩০২ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে। কবিতাটিতে রবীন্দ্রনাথ শতবর্ষের পরের পাঠককে বসন্তের পুষ্পাঞ্জলি পাঠিয়েছেন।
আজি হতে শতবর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি
কৌতুহলভরে, আজি হতে শতবর্ষ পরে!
কাজী নজরুল ইসলাম ১৩৩৪ সালের আষাঢ় মাসে তাঁর ‘১৪০০ সাল’ কবিতায় এর উত্তর লেখেন। তাতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভক্তি। বিস্তারিত পড়ুন 

বাজেয়াপ্ত নজরুল কাব্যগ্রন্থ এবং তাঁর কারাজীবন এর কথা_আদনান সৈয়দ

নজরুল ছিলেন সাম্যবাদী কবি,প্রেমের কবি। জাতি,বর্ণ, ধর্ম,গোষ্ঠীর এসব কিছুর উর্ধে তিনি তাঁর সাহিত্য কে স্থান দিয়েছিলেন মানব প্রেম আর জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায়।   মাত্র একুশ বছর বয়সে ধমকেতুর মত নজরুল বাংলার কাব্য আকাশে হাজির হয়ে আবার হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে গেলেন। ৪২ সাল থেকেই কবি বাকরুদ্ধ! কিন্তু জীবনের এই অল্প সময়েই নজরুল তাঁর বাংলার কাব্যমোদিদের জন্য রেখে যান বিষে ভরা এক চির বিদ্রোহের বাণী। গোটা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীরা যখন বন্দুকের নল উঁচিয়ে চর দখলের লড়াইয়ে ব্যাস্ত ঠিক সেই মুহুর্তে নজরুলের মত এক বিদ্রোহীর আত্বপ্রকাশটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা ছিল না। একদিকে গোটা ভারত বর্ষে শুরু হয়েছিল গান্ধীজীর নেতৃত্বে বৃটিশ বিরোধী অসহযোগ আন্দোলন,বেঙ্গল প্যাক্ট, সাইমন কমিশন,নেহরু রিপোর্ট আবার পাশাপাশি রুশ বিপ্লব, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় বিপর্যয় সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীতে চলছিল এক নিদারুন মানবিক অস্থিরতার লড়াই। মানবতার পতনের সেই অস্থির দিনগুলোতে আগুন ঠিকরে বের হয়ে আসা বাংলার আপোষহীন মানুষের মাঝে বিদ্রোহের মন্ত্র নিয়ে ঝড়ো হাওয়ার মত আবির্ভাব হয়েছিল বাবড়ি দোলানো এক নতুন কবির। সেটা ছিল ১৯২১ সাল।   বিস্তারিত পড়ুন 

নজরুলের সাত কাহন

লেটোর দলে ভিড়ল ছেলেটা
কিশোর বয়সেই লেটোর দলে ভিড়ে গেল ছেলেটা। আর ভিড়বে না-ই বা কেন? সংসারে সচ্ছলতা ছিল না। বাবা ছিলেন মসজিদের ইমাম। তিনি মারা গেলেন তাঁর ৯ বছর বয়সে। অসচ্ছল সংসারে এবার অভাব এসে হানা দিল। বাধ্য হয়ে মক্তবের পড়াশোনা ছেড়ে দুখু মিয়াকে নামতে হলো জীবিকা অর্জনে। মক্তবের নিম্ন মাধ্যমিক পাস দিয়ে ভালো চাকরি কি মেলে! মক্তবের শিক্ষকতা শুরু করলেন তিনি। এই সঙ্গে গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ। এসবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান রপ্ত হলো ঠিকই; কিন্তু সংসার যে চলে না। তাই তাঁর লেটোগানের দলে ভেড়া। দুখু একটু খেয়ালি স্বভাবেরও। তাঁর চাচা কাজী বজলে করিম আবার চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটোগানের বিশিষ্ট ওস্তাদ। লেটোগান বাংলার রাঢ় অঞ্চলের একজাতীয় নৃত্য-অভিনয়-গীতবহুল পালাগান। লেটো দলেই দুখুর সাহিত্যচর্চা শুরু। এখানে তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্য পড়া শুরু করেন। বছরখানেকের ম বিস্তারিত পড়ুন 

নজরুল ইন্সটিটিউট

ইতিহাস, লক্ষ্য ও কার্যাবলি… …

 নজরুল ইন্সটিটিউট পরিচিতি
বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় যুগস্রষ্টা কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভার যাদু স্পর্শে শুধু কবিতা নয় সঙ্গীতেও রেখে গেছেন অতুলনীয় অবদান। আমাদের সাহস সৌন্দর্য ও শৈল্পিক অহংকারের মহত্তম নামটিও তাঁরই। বাংলাদেশের সাহিত্য, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির প্রধান রূপকার এই মহান কবি আমাদের মানবিক চেতনারও প্রতীক। এজন্য তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তাঁর অমর স্মৃতি রক্ষা, তাঁর জীবন, সাহিত্য, সংগীত ও সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রকাশনা ও প্রচার এবং তাঁর ভাব-মূর্তি দেশ-বিদেশে উজ্জ্বলরূপে তুলে ধরার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নজরুল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিস্তারিত পড়ুন 

নজরুল_আব্দুর রউফ চৌধুরী

প্রবেশিকা
আমাদের জাতীয় কবি
বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, অগ্রণী বাঙালি কবি, অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী, সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতস্রষ্টা, দার্শনিক এবং বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত কবি কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার বিচিত্র প্রকাশ। তাঁর কবিতা ও গান ভারতবর্ষে সমভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে নজরুলের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বিস্তারিত পড়ুন 

বাংলা চলচ্চিত্রে কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, গায়ক বা সুরকারই নন চলচ্চিত্রের মানুষ হিসেবে পেয়েছেন সাফল্য। জাতীয় কবি ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালনায় প্রথম বাঙালী মুসলমান। কবি ১১৬তম জন্মবার্ষিকীতে সে হদিস খানিক নেওয়া যাক। নজরুল মোট কটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা এখনো পুরোপুরি বলা সম্ভব নয়। বিস্তারিত পড়ুন 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

পারিভাষিক শব্দ

প্রকৃতি ও প্রত্যয় H S C ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য

সমাস H S C ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য।